1. admin@sylheterkotha.com : admin :
October 19, 2025, 7:02 am
Title :
রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-সিলেটে ইসি আনোয়ারুল পূজা উদযাপন পরিষদ দক্ষিণ সুরমা ও মোগলাবাজার শাখার বিজয়া পূনর্মিলনী সম্পন্ন সিলেটে নামলো ঢাকার ফ্লাইট : শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত -তারেক রহমান ৭ দিন ধরে শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, আজ কালো পতাকা মিছিল আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় নিহত ৪০, আহত অন্তত ১৭৯ দেশের মানুষের সেবা করতে দেশেই থাকবেন-এম এ মালিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান হোক মানবিক মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐক্যের মঞ্চ: ডিসি সারওয়ার আলম বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা হচ্ছে জাতির মুক্তি সনদ-আবুল কাহের চৌধুরী শামীম দক্ষিণ সুরমার ব্যবসায়ীদের সাথে সিলেট ব্যবসায়ী ফোরামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আমাদের আর্তনাদে কান দেয়নি দুনিয়া’

  • Update Time : Monday, April 7, 2025
  • 117 Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ফিলিস্তিনের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত উপত্যকা গাজা থেকে সালেহ আল জাফরি নামে গাজার এক বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় রোববার মৃত্যুর আগে লিখেছিলেন, ‘রাফাহ আর নেই। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে রাফাহ। অল্প সময়ের মধ্যে গাজাও নিঃশব্দে মিলিয়ে যাবে দুনিয়ার মানচিত্র থেকে। একটি একটি করে আলো নিভে যাচ্ছে, একটি একটি করে নিশ্বাস থেমে যাচ্ছে। আমরা বাঁচার আর্তনাদ পাঠালেও পৃথিবী কান দেয়নি। আপনারা আমাদের কেবল জান্নাতে খুঁজে পাবেন। বিদায়! হে ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর উম্মত…।’

গাজা উপত্যকা একটি ভূখণ্ড, যেখানে প্রতিটি সূর্যোদয় নতুন বিপর্যয়ের বার্তা নিয়ে আসে। ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলা, আর্টিলারি শেলিং এবং ভূমি অভিযানে গাজার সাধারণ মানুষ পালিয়ে বাঁচারও জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। গাজার মানুষ আজ মৃত্যুপুরীতে বাস করছে। তাদের অপরাধ শুধু এই যে, তারা ফিলিস্তিনি। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, মায়েরা সন্তানদের জন্য এক বাটি ভাত জোগাড় করতে পারছে না, বৃদ্ধরা নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে মরতে পারছে না। পুরো উপত্যকাটি আজ মৃত্যুর স্তব্ধতায় ডুবে আছে। ইসরাইলি বাহিনীর প্রচণ্ড আগ্রাসনের ফলে এই অঞ্চলটি আর শুধু ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন নয়, মানবিকভাবেও সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। ইসরাইলি আগ্রাসনে এই ভূমি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, যেখানে বেঁচে থাকাটাই এখন সৌভাগ্যের বিষয়। নিরস্ত্র নারী, শিশু, বৃদ্ধ-কেউই রক্ষা পাচ্ছে না এই নৃশংসতা থেকে।

পলিটিকো লিখেছে, ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক অভিযানে গাজার দক্ষিণে নতুন ‘মোরাগ করিডোর’ স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাফাহ শহরকে বাকি গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এই করিডোরের মাধ্যমে হামাসের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই করিডোরের মাধ্যমে হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর কথা বলেছেন, তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। হারেৎজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সরকারের কাছে গাজার সাধারণ মানুষের জীবন মূল্যহীন, তাদের একমাত্র লক্ষ্য হামাসকে দমন করা, যদিও এর মূল্য দিচ্ছে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিরা। রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। নতুন করে গাজায় শুরু করা হামলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন হাজার ১৮৪ জন। গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ নিয়ে গত ১৭ মাসের যুদ্ধে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। সেই সঙ্গে গাজায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

এদিকে গত ২৩ মার্চ গাজায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী হত্যার বিষয়ে ইসরাইলের সেনাবাহিনী তাদের সৈন্যদের ভুল স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় ইসরাইলের সেনাবাহিনী শুরুতে দাবি করেছিল, অন্ধকারে হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়া গাড়ি বহরটির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা গুলি চালিয়েছিল। আর গাড়িগুলোর চলাচলের বিষয়ে আগে থেকে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি বা তাদের জানানো হয়নি। নিউইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, গাড়িগুলো রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর ভোর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি ছোড়া শুরু হয়।

উপত্যকায় ​জীবনযাত্রার মৌলিক উপকরণগুলোর অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, মার্চের শুরু থেকে এক মিলিয়নেরও বেশি শিশু জরুরি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের জীবনকে চরম সংকটে ফেলেছে। আরব নিউজ লিখেছে, খাবারের অভাব এতটাই প্রকট যে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গাজা ‘ক্ষুধার নরকে’ পরিণত হতে চলেছে বলে সতর্ক করেছে। সেখানে এখনও বেঁচে থাকা ২২ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তারা মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান। খাবারের অভাবে ৫ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি অনাহারের সম্মুখীন হচ্ছেন, যা মানবিক বিপর্যয়কে আরও তীব্রতর করছে। আলজাজিরা লিখেছে, সুপেয় পানির সংকটও মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজার শেষ কার্যকরী সমুদ্রের পানি পরিশোধনাগারটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে বিশুদ্ধ পানির প্রাণঘাতী অভাব দেখা দিয়েছে। মানুষ তৃষ্ণার জ¦ালায় বাধ্য হয়ে ময়লা পানি পান করছে আর পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে মৃত্যুর প্রহর গুণছে।

সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। রাফাহতে একটি গণকবর থেকে ১৪ জন ফিলিস্তিনি জরুরি সেবাকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই ইসরাইলি সেনাদের বর্বর হত্যাযজ্ঞের স্বীকার। এই ঘটনাও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল পাইস তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ​গত কয়েক দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ প্রাণ হারিয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে গতকাল রোববারও এক পরিবারের চার সদস্যসহ মোট ১৯ জন নিহত হয়েছেন। ​গাজার হাসপাতালগুলোও আর সচল নেই। বন্ধ হয়ে গেছে নবজাতক ইনকিউবেটরসহ সব জরুরি সেবা।

গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড। সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে আমরা বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি। এই উদ্দেশ্য সফল করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের দিকে ইঙ্গিত করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব এখন নবজাতক ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেক সচেতন। অথচ গাজাবাসী জীবন ধারণের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। মার্কিন বোমার আঘাতে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। অগণিত মা ও শিশু সাধারণ যত্নের অভাবে এবং বিস্ফোরণের আঘাতে মৃত্যুবরণ করছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ফিলিস্তিনিরা পালিয়ে বাঁচারও সুযোগ পাচ্ছেন না; গাজার প্রতিটি কোনায় মৃত্যুর ভয়াবহ ছায়া। জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণ-খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ-সবকিছুর অভাব তাদের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে এই মানবিক বিপর্যয় থেকে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Breaking News
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!