সিলেটের কথা ::: দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রশিক্ষিত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিচালক মোঃ জিয়াউল হাসান, বিভিএমএস, পিএএমএস। ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়, সিলেট জেলায় অনুষ্ঠিত ভিডিপি অ্যাডভান্সড কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। তার বক্তব্যে উঠে আসে বাহিনীর সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য—কেবল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নয়, বরং দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলাবোধের মধ্য দিয়ে প্রতিটি সদস্যকে একজন স্বাবলম্বী এবং জনসম্পদে পরিণত করে তোলা।
উপমহাপরিচালক তার ভাষণে সদস্যদেরকে সৎ, সুশৃঙ্খল,কর্তব্যপরায়ণ ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মাধ্যমে নিজেদেরকে দেশপ্রেমে নিবেদিত হওয়ার আহবান জানান । তার মতে, দেশপ্রেম কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়, এটি ব্যক্তির আচরণ, শৃঙ্খলা এবং দেশের প্রতি তার নিবিড় অঙ্গীকার সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এই দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভিডিপির সদস্যরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে।আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার মতো জাতীয় উৎসবে তাদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, এসজিপি, বিএএম, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি এর নির্দেশনা মোতাবেক, এই উৎসবে দেশের ৩২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপে দুই লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে । তারা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত হবে, যা প্রতিটি পূজামণ্ডপে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করবে বলে প্রধান অতিথি আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।
উপমহাপরিচালক তার বক্তৃতায় প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা সকল সদস্যকে তাদের গ্রামে ফিরে গিয়ে পূর্বে ভিডিপি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সকল সদস্য-সদস্যাদের একত্রিত করে তাদের গ্রামভিত্তিক মডেল ভিডিপি প্লাটুনগুলোকে পুনরুজ্জীবিতকরণ এবং (AVIMS) সফটওয়্যারে প্রত্যেকটি ভিডিপি সদস্যদেরকে সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, (AVIMS) সফটওয়্যার হবে আনসার ভিডিপি পরিবারের একটি অনবদ্য নেটওয়ার্ক। আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা সমাজের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসে এবং তারা তাদের নিজ নিজ এলাকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, বাল্যবিবাহ এবং ইভটিজিংয়ের মতো সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে বলে তিনি বলেন ।
উপমহাপরিচালক মোঃ জিয়াউল হাসান তার বক্তৃতায় আনসার-ভিডিপি মহাপরিচালকের “সঞ্জীবনী প্রজেক্ট”-এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এই প্রকল্পটি বাহিনীর মহাপরিচালক এর একটি দূরদর্শী চিন্তাভাবনার ফসল, যা দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ এবং সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন । “সঞ্জীবনী প্রজেক্ট” একটি “সামাজিক বিনিয়োগ” মডেলের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পিত এবং এর মূল লক্ষ্য হলো সদস্যদেরকে উৎপাদনমুখী কার্যক্রমে যুক্ত করে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা । প্রতিটি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে ৩০ জন ভিডিপি সদস্যের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদেরকে কর্মমুখী করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং একটি প্রতিশ্রুতি যে, বাহিনীর কোনো সদস্য আর বেকার থাকবে না। এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনেও সরাসরি অবদান রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বর্তমান মহাপরিচালকের সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে এই বাহিনী একটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই সুশৃংখল এবং উৎপাদনশীল বাহিনীতে রূপান্তরের মাধ্যমে বাহিনী ও দেশের যুগপৎ উন্নয়নের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভিডিপি অ্যাডভান্সড কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে দুজন প্রশিক্ষণার্থী এই কোর্স সম্পর্কে তাদের অনূভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান যে,এই কোর্সের বিভিন্ন মডিউলের মাধ্যমে তারা পিটি-প্যারেড,অস্ত্র পরিচালনা, মানব নিরাপত্তা, সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা , কমিউনিটি এলার্ট মেকানিজম,অপরাধ প্রতিরোধ, জরুরি সাড়াদান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং এখানে অর্জিত জ্ঞান তারা শুধু সার্টিফিকেটের জন্য নয়—বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করতে চান।
উক্ত কোর্সে প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা এবং ‘বেস্ট ইন ড্রিল’, ‘মোস্ট ডিসিপ্লিনড’, ‘বেস্ট ইন অ্যাকাডিমিয়া’ এবং ‘অলরাউন্ডার ‘ ক্যাটাগরিতে ক্রেস্ট ও প্রশিক্ষণ সনদ প্রদান করা হয়।এছাড়াও অনুষ্ঠানে সিলেট জেলার জেলা কমান্ড্যান্ট শাওন আসাদ , সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট তানিয়া আক্তার , সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট ফারুক হোসাইন , উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ রোকন উদ্দিন এবং প্রশিক্ষকগণ এবং উক্ত কোর্সের ৮০ জন প্রশিক্ষণার্থী উপস্থিত ছিলেন।পরবর্তীতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ সুভেনিয়ার বিতরণ এবং সমাপনী প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply