সংবাদদাতা, মধ্যনগর ::: সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের জন্য নির্মিত ‘রাজহংস’ নামের একটি হাউসবোট অবৈধভাবে দখলের অভিযোগে মধ্যনগর উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মমিনুল হক বেনুকে কারন দর্শানোর চিঠি দিয়েছে জেলা বিএনপি। সেই সাথে তার যুগ্ম আহবায়ক পদ স্থগিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন ও স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য এডভোকেট মোঃ আব্দুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযুক্ত মমিনুল হক বেনুকে বলা হয়, ‘মধ্যনগরে ‘রাজহংস’ হাউজ বোট আপনি দখলে নিয়েছেন, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। মালিক পক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই মর্মে অভিযোগ করেছেন, এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
আপনার মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদ স্থগিত করা হলো। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কেন আপনার বিরুদ্ধে পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এর কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল।’
চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়, বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় টিম লিডার জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এ জেড জাহিদ হোসেন, বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ ও সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ ছিদ্দিকীকে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা দীপংকর চৌধুরী পর্যটন ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে হাউসবোট ‘রাজহংস’ তৈরি করেন। স্থানীয়ভাবে মিয়া নামের এক কেয়ারটেকারের মাধ্যমে হাউসবোট তৈরির কাজ করলেও পরে তিনি বোটটির দায়িত্ব ফুল মিয়ার হাতে তুলে দেন।
এ প্রসঙ্গে হাউসবোট রাজহংসের মালিক দাবীদার দীপংকর চৌধুরী বলেন, ‘মমিনুল হক বেনু বিগত ২০২৪ সালের পাঁচই আগষ্টের পর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে হাউসবোটটি দখলের চেষ্টা করে আসছিলেন। মধ্যনগর থানার তৎকালীন ওসি সজীব রহমানের নাম ব্যবহার করে ফুল মিয়াকে থানায় ডেকে এনে বেনু মিয়ার লোকজন বোটটি বুঝে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এর পরের দিন বেনু মিয়া তার লোকজন নিয়ে এসে জোরপূর্বক বোটটি দখল করে নেয় এবং নাম পরিবর্তন করে তা পরিচালনা করছে।’
দীপংকর আরও বলেন, ‘আমার নৌকাটি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। এতে আমি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। বিএনপি যদি সত্যিই দলীয় শৃঙ্খলা মানে, তাহলে এমন ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে আমি মনে করি।’
তবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর মমিনুল হক বেনু’র বিরুদ্ধে হাউজবোট দখলের অভিযোগ পত্রের ছায়ালিপি এ প্রতিবেদকের হস্তগত হলে সেখানে অভিযোগকারী হিসেবে ‘হাউজবোট রাজহংস এর মালিকদের পক্ষে’ মেহেদি হাসান নামে একজনের স্বাক্ষর রয়েছে।
অভিযুক্ত মমিনুল হক বেনু জানান, ‘দুই বছর আগে দীপংকর বোটটি নির্মাণের সময় স্থানীয় অনেক মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেন। পাওনাদারদের অনুরোধে আমি বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করি। দীপংকর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দুই মাসের মধ্যে দেনা পরিশোধ করবেন, তা না করায় আমি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে বোটটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিই।’
থানার ওসির মাধ্যমে বোট বুঝে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীপংকর নিজেই আমাকে নৌকাটি বুঝিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীপংকর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে জড়িত। অপরাপর ফ্যাসিবাদীদের যোগসাজশে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করে, আমার দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এর প্রেক্ষিতে জেলা বিএনপি আমার দলীয় পদ স্থগিত করেছে এবং আমাকে কারন দর্শানোর জন্য চিঠি দিয়েছে। আমি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মেনেই এই মিথ্যা অভিযোগের জবাব দেব।’
মমিনুল হক বেনুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘সেইটা জানার জন্যই তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। কেন তার বিরুদ্ধে পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেওয়া হবেনা, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার কারন দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
Leave a Reply