সিলেটের কথা ডেস্ক :: ভারতীয় উজানের পানি ও টানা বর্ষণে ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে অন্তত অর্ধলক্ষ্য মানুষ পানিবন্দি হয় বলে জানা গেছে তবে নিরাপদ আশ্রয়ে কেউ কেউ বসতবাড়ির মায়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ফেনী-ফুলগাজী-পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পাউবো ফেনীর তথ্য মতে, জেলায় ৭ জুলাই সকাল নয়টা হতে ৯ জুলাই সকাল ৯ টা পর্যন্ত ৪৮ ঘন্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মুহুরি নদীর পরশুরাম গেজ স্টেশন ৮ জুলাই সকাল ছয়টায় পানির লেভেল ৬.৯৭ মিটার, রাত আটটায় ১৩.৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার, এই সময়ে প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরামে মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ ভারত টাই বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। মুহুরী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে জঙ্গলগোনা ২ টি (মুহুরী, ডান তীর), উত্তর শালধর ১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), নোয়াপুর ১ টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), পশ্চিম অলকা ১ টি (মুহুরী নদীর বাম তীর), ডি এম সাহেবনগর ১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), পশ্চিম গদানগর ১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর), দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া ১ টি (কহুয়া নদীর বাম তীর), পূর্ব সাতকুচিয়া ১ টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), উত্তর টেটেশ্বর ১টি (কহুয়া নদীর বাম তীর) সহ ১০ টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিকে হয়েছে ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর দেড়পাড়া ২ টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), শ্রীপুর ১টি (মুহুরী নদীর ডান তীর), উত্তর দৌলতপুর ১ টি (কহুয়া নদীর ডান তীর), কমুয়া ১ টি (সিলোনিয়া নদীর বাম তীর) সহ ৫ টি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি উপচিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তবে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবশেষ সকাল ৯ টায় পানির লেভেল ছিল ১৩.৩১ মিটার।
এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দেখা দেওয়ায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়।এতে করে অর্ধ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সর্বোচ্চ ফেনীতে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। যা চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্যমতে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। বুধবার উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘জেলায় টানা দুদিন ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে মাঝারি বা ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।’
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাত ১২টার পর মুহুরী নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি প্রবাহ বাড়বে। আরও নতুন বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে।
Leave a Reply