সিলেটের কথা ::: মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এম.কে.এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন (পিপিএম) বলেছেন, সমাজে বিভাজন তৈরি করে এমন শব্দ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কথায় কথায় বলি ‘মাইনোরিটি গ্রুপ’ বা ‘সংখ্যালঘু’। এসব শব্দ সমাজে বিভেদ তৈরি করে। এগুলো আমাদের অভিধান থেকে মুছে ফেলতে হবে। বাংলাদেশে সবার জন্য সমান অধিকার রয়েছে। তাহলে কেন কাউকে সংখ্যালঘু বলে আলাদা করা হবে?
গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বড়লেখা উপজেলার ১৩২টি সার্বজনীন দূর্গাপূজা মণ্ডপ কমিটি, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, পূজা উদযাপন ঐক্যফ্রন্ট, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে শরদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভাটি বড়লেখা থানা পুলিশ প্রশাসনের আয়োজনে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রীতির প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ সুপার আরও বলেন, একটি রাষ্ট্রে সব ধর্মের মানুষ থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। আমাদের পাড়া-মহল্লায় হিন্দু-মুসলিমরা একসাথে বসবাস করে। বিপদে-আপদে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ায়। কেউ কাউকে ঘৃণা করে না। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এখন বাংলাদেশের মডেল।
তিনি আরও বলেন, ১৫-২০ বছর আগে পূজা মণ্ডপে হামলা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার ঘটনা ছিল না। কিন্তু আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, ততই হানাহানির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, এখন এআই ব্যবহার করে পূজামণ্ডপে হামলা বা মূর্তি ভাঙচুরের ভুয়া ছবি ছড়ানো সম্ভব। এগুলো দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আগে যাচাই করে নেবেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
পূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের মা-বোনেরা যেন নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারেন, সে জন্য পুলিশ সর্বদা তৎপর থাকবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। প্রতিটি থানার ওসিকে যুক্ত করে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হবে। এতে যেকোনো বার্তা সরাসরি পুলিশ সুপারের কাছে পৌঁছাবে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমল হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু, জেলা জামায়াতে ইসলামির সূরা সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, বড়লেখা সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার হায়দারুল ইসলাম আকবরী, উপজেলা জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমীর ফয়সল আহমদ, বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, এনসিপির জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক তামিম আহমদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনজিত কুমার পাল, পূজা উদযাপন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শৈলেশ চন্দ্র রায়, উপজেলা আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষক তাহের মিয়া প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি সার্বজনীন দূর্গাপূজামন্ডপ কমিটির সভাপতিবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply