আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::: কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার দোহায় জরুরি বৈঠকে বসে আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্রগুলো। প্রায় ৬০টি দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়।
কী ঘটেছিল দোহায়?
গত ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন হামাস নেতারা। ঠিক সেই সময় দোহায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে পাঁচ হামাস সদস্য ও কাতারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। তবে হামাসের শীর্ষ নেতারা প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনার পরই কাতার জরুরি সম্মেলনের ডাক দেয়।
সম্মেলনের যৌথ বিবৃতি
বৈঠক শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, “ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা বন্ধ করতে সব ধরনের আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।” এর মধ্যে রয়েছে-
১. ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা।
২. দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া শুরু।
৩. জাতিসংঘে ইসরায়েলের সদস্যপদ স্থগিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া।
কারা অংশ নিলেন, কারা নিলেন না
সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ বহু নেতা উপস্থিত ছিলেন।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা দেশগুলোর মধ্যে-সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো-শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেননি; প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেন।
নেতাদের বক্তব্য
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ভেস্তে দিতে হামলা চালিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, ‘আজ কাতার নিশানা হলে আগামীকাল অন্য আরব রাজধানীগুলোও হতে পারে। তাই এখনই এক হতে হবে।’
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, এ ধরনের হামলা বিদ্যমান শান্তিচুক্তিগুলোও বিপন্ন করতে পারে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসরায়েলের নীতিকে ‘সন্ত্রাসী মানসিকতা’ আখ্যা দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
ইসরায়েল সফরে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার কাতারে যাচ্ছেন। তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, হামাস নির্মূলে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে যাবে। তবে দোহায় হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপোড়োন তৈরি হয়েছে। কাতারেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত।
গাজা ইস্যুতে চাপ বাড়ছে
বিশ্লেষকদের মতে, এই জরুরি সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো। ইতিমধ্যে গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা চলছে।
Leave a Reply