1. admin@sylheterkotha.com : admin :
  2. editor@sylheterkotha.com : editor :
December 15, 2025, 11:14 pm

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছায়াতলে মানবিক সংকট বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি শ্রমিকদের

  • Update Time : Wednesday, November 5, 2025
  • 35 Time View

Manual6 Ad Code

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি ::: সিলেটের সীমান্তবর্তী পর্যটনকেন্দ্র জাফলং,নদীর পাথর, পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আদিবাসী সংস্কৃতির কারণে দর্শনপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে এই সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের ছায়াতলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান পাথর-বালু উত্তোলন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জীবনমানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
স্থানীয় পাথর শ্রমিকরা বহু প্রজন্ম ধরে নদী থেকে পাথর ও বালু উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
পাথর-বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। স্থানীয় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও জীবিকার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আর্থিক নিরাপত্তাও প্রভাবিত হচ্ছে। প্রশাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, শ্রমিকদের জীবনমান ও পরিবারিক নিরাপত্তার দিকে সমন্বিত নজর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছেন সচেতন মহল।

Manual6 Ad Code

২০১৫ সালে জাফলংসহ ১৪.৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা পরিবেশ সংকটাপন্ন (ইসিএ) ঘোষণা করেন তৎকালীন সরকার। ঘোষণার পর থেকে প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযানে শ্রমিকদের উপার্জনের হাতে বাওয়া নৌকা ও পাথর উত্তোলনে যন্ত্রপাতি ধ্বংস, এবং আইনগত নিষেধাজ্ঞার ফলে এই কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় পাথর শ্রমিক ও নেতা আশিক মিয়া বলেন, “আমি ২০ বছর ধরে এই নদীতে কাজ করে জীবন নির্বাহ করেছি। আমার বাবা এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে নদীতে পাথর নেই। বালু উত্তোলনের কাজে নেমেছি, কিন্তু প্রশাসন নৌকা ভাঙছে, জেল জরিমানা আরোপ করছে। তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ, পরিবার চালানোর উপায় নেই।” গোয়াইনঘাট উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ও শ্রমিক নেতা আব্দুল জলিল যোগ করেন, “বারকিশ্রমিকরা বহু প্রজন্ম ধরে এ পেশায় যুক্ত। আইন ও প্রশাসনের পদক্ষেপে শ্রমিকরা ক্রমশ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। বিকল্প কর্মসংস্থান না দিলে শ্রমিকদের পরিবার অনাহারে দিন পার করছে।” পাথর বালু উত্তোলন না করতে দেওয়া হলে শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আব্দুল জলিল, আল-আমীন,আব্দুর রহমান, মানিক মিয়াসহ শ্রমিকরা আরও উল্লেখ করেন, তারা আগেও কয়েক দফা মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছেন, কিন্তু সরকারের নজর এ পর্যন্ত পড়েনি। তাই শ্রমিকদের দাবি—জীবন নির্বাহের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে জাফলং পিয়াইন নদী থেকে উত্তোলিত পাথর দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে ক্রাশিং করে চলে আসছিল ক্রাশার মেলগুলো, আর এই কাজের জন্য আশপাশে গড়ে উঠেছে প্রায় তিন শতাধিক (পাথর ভাঙ্গার যন্ত্র) ক্রাশার মেশিন। আইনি নিষেধাজ্ঞা ও নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে বৈধ পন্থায় আমদানিকৃত এলসি পাথর ভাঙার কাজে চলছে মিলগুলো। সম্প্রতি দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের নির্দেশনায় এসব মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং মিটার জব্দ করে নেওয়ায়। এতে মিল মালিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের মিলের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ জং ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম এবং কয়েকশো কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
জাফলং ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত বলেন, “নদী থেকে পাথর উত্তোলন দীর্ঘদিন বন্ধ। আমরা ভারত থেকে বৈধভাবে আমদানিকৃত এলসি পাথর নিয়ে ক্রাশিং করছিলাম। এবং কোন প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই সম্প্রতি প্রশাসনের অভিযানে, আমাদের প্রায় ২০০টি মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দ করে নিয়ে গেছে প্রশাসন। এতে আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাতে তাদের মিলগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত পুনঃস্থাপন করা হয়।
পাথর ব্যবসায়ী ও মিলমালিক আলাল উদ্দিন বলেন, “প্রাথমিক লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে মিল স্থাপন করেছি। ধারাবাহিক অভিযান আমাদের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। ব্যাংক লোন এবং যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আমরা মারাত্মকভাবে দুশ্চিন্তায়।” তাই তাদের মিটারগুলো ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
বিদ্যুৎ বিভাগ জৈন্তাপুরের আবাসিক প্রকৌশলী সজল চাকলাদার জানান,“উপদেষ্টা পর্যায় থেকে নির্দেশনা থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, “ভারত থেকে বৈধভাবে আমদানিকৃত পাথর ভাঙার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এবং বিকল্প কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, খুব শিগ্রই শ্রমিকদের জন্য কার্যকর সমাধান আসবে।
স্থানীয় ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, সিলেট অঞ্চলে বারকি নৌকার ব্যবহার প্রায় ৩০০ বছর পুরনো। ব্রিটিশ শাসনকালে জন বারকি নামক নৌকার কারিগর এই নৌকা তৈরি করেছিলেন। বর্ষা মৌসুমে একটি বারকি নৌকায় অন্তত তিনজন শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করেন। জাফলং ও সীমান্তবর্তী নদ-নদীতে প্রায় ৫০ হাজার বারকি নৌকা চলাচল করে।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সচেতন নাগরিক, স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী করিম মাহমুদ লিমন জানান, বারকি চলুক শ্রমিক বাঁচুক। বংশ পরম্পরায় যারা শ্রমে ঘামে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে ইজারা পন্থা বন্ধ করে হলেও অন্তত তাদের শ্রমকে ন্যস্ত করুন। দেখবেন, পাথরে ফুল ফুটবে। যন্ত্রবিহীন, যন্ত্রনাহীন শ্রমে ঘামের দৃশ্যপট হবে প্রাকৃতিক পর্যটনের এক সেরা আকর্ষণ।
প্রসঙ্গত: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান তগ ১৪ জুন জাফলং পরিদর্শনে এসে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না বলে নির্দেশ দেন। দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ১৮জুন থেকে ২৫ এবং ২৯ জুন পর্যন্ত তৃতীয় দফা অভিযানে ১৬৭টি পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার জব্দ করে নিয়ে যায় স্থানীয় প্রশাসন। একইভাবে দফায় দফায় অভিযানে শ্রমিকদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও তাদের হাতে বাওয়া নৌকাগুলো ধ্বংস করে দেয় প্রশাসন।
এছাড়াও গত ৩১ অক্টোবর জাফলংয়ে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপি পরিবার, ব্যবসায়ী, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী শ্রমিকদের পুনঃকর্মসংস্থান, নিরাপদ পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

Manual3 Ad Code

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Sylheter Kotha
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!