1. admin@sylheterkotha.com : admin :
  2. editor@sylheterkotha.com : editor :
December 15, 2025, 9:07 pm

প্রবারণা ও কঠিন চীবর দান: সমকালীন পাঠ

  • Update Time : Monday, October 6, 2025
  • 134 Time View

Manual2 Ad Code

লায়ন উজ্জল কান্তি বড়ুয়া ::: প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমায় পালিত এ দিনটি কেবল আচারানুষ্ঠান নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও সমন্বয়ের এক মহাশিক্ষা। হাজার বছর ধরে এই দিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বর্ষাবাস শেষে আত্মশুদ্ধি ও মিলনের চেতনায় নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তোলে।

প্রবারণার মূল দর্শন :
পালি শব্দ প্রবারণা অর্থ আহ্বান, ত্যাগ ও প্রায়শ্চিত্ত। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে ভিক্ষুগণ তিন মাস বর্ষাবাসে ধ্যান-সাধনায় কাটান। বর্ষা শেষে প্রবারণার দিনে তাঁরা পরস্পরের কাছে দোষ স্বীকার করেন ও ক্ষমা চান। এর উদ্দেশ্য হলো আত্মসমালোচনার মাধ্যমে শুদ্ধ হওয়া এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে নতুনভাবে আবদ্ধ হওয়া।

তথাগত বুদ্ধ স্বয়ং এই প্রথার সূচনা করেছিলেন। তাঁর দর্শনে স্পষ্ট—মানুষের সমাজে মতভেদ অনিবার্য, কিন্তু তার সমাধান সম্ভব খোলামেলা স্বীকারোক্তি ও ক্ষমার মধ্য দিয়েই। আধুনিক যুগে যেখানে সংঘাত, বিভাজন ও হিংসা বেড়েই চলেছে, সেখানে প্রবারণার শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নিজেকে সৎভাবে বিচার করা, অন্যকে ক্ষমা করা এবং মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা।

Manual1 Ad Code

আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিকতা :
আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় আমরা দেখি রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় বিভাজন, পরিবেশ বিপর্যয় এবং সামাজিক অবক্ষয়। ব্যক্তিস্বার্থের কারণে ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা ক্রমশ কমে আসছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রবারণার শিক্ষা সমকালীন সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এ শিক্ষা আমাদের আহ্বান জানায়- বিরোধ ভুলে গিয়ে সত্যকে ধারণ করতে, অহিংসার পথে অটল থাকতে, ক্ষমার মাধ্যমে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এমন একটি মানসিকতা শুধু ভিক্ষু-সংঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার এবং সমগ্র জাতির জন্যও সমান জরুরি। যদি আমরা প্রবারণার শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করি, তবে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক কিংবা ধর্মীয় মতভেদ- সবকিছুরই সমাধান সম্ভব শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে।

কঠিন চীবর দানের মাহাত্ম্য :
প্রবারণার সঙ্গে যুক্ত আছে কঠিন চীবর দান, যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বছরে একবার, আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে এই দান করা যায়। একদিনে সুতা তৈরি, কাপড় বোনা, কাটা, সেলাই ও রঙ সম্পন্ন করে ভিক্ষুকে যে ত্রি-চীবর দান করা হয়, সেটিই কঠিন চীবর। এর মাহাত্ম্য নিহিত শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া ও সীমিত সময়ে সম্পাদিত হওয়ার মধ্যে। তাই এটি সর্বশ্রেষ্ঠ দান হিসেবে স্বীকৃত। ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে- শত বছর যাবৎ নানা দান করার চেয়ে একখানা কঠিন চীবর দানের মহাফল অতুলনীয়।

Manual5 Ad Code

সমকালীন জীবনে কঠিন চীবরের শিক্ষা :
আজকের দ্রুতগতির বিশ্বে মানুষ সহজলভ্যতা ও ভোগবাদে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ধৈর্য, অধ্যবসায় ও সময়ানুবর্তিতা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কঠিন চীবর দান আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মূল্যবান কাজ কখনো সহজে আসে না; এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পরিশ্রম, ধৈর্য ও সহযোগিতা। এ দানের শিক্ষা হলো- শ্রমের মূল্যকে শ্রদ্ধা করা, সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা, একাত্মতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা। আজকের ভোগবাদী সংস্কৃতি যেখানে স্বল্প প্রচেষ্টায় তাত্ক্ষণিক ফল পেতে চায়, সেখানে কঠিন চীবরের এই চর্চা মানুষকে ফেরায় ত্যাগ, পরিশ্রম ও সমষ্টিগত প্রয়াসের মূল্যবোধে।

সমন্বিত শিক্ষা :
প্রবারণা ও কঠিন চীবরের সম্মিলিত শিক্ষা তাই কেবল ধর্মীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এগুলো সামাজিক ও জাতীয় জীবনের জন্যও এক শক্তিশালী দিকনির্দেশনা। প্রবারণা শেখায় আত্মসমালোচনা, ক্ষমা, মৈত্রী ও অহিংসা। কঠিন চীবর শেখায় ত্যাগ, শ্রম, সময়ানুবর্তিতা ও কল্যাণে নিবেদন। এই দুই চর্চা মিলেই তৈরি হয় পরিচ্ছন্ন সমাজ ও শান্তিময় পৃথিবীর ভিত্তি।

উপসংহার :
আজকের মানবসভ্যতা যদি প্রবারণা ও কঠিন চীবরের এই শিক্ষা গ্রহণ করে, তবে সহিংসতা, ঘৃণা ও স্বার্থান্ধতা পেছনে ফেলে আমরা গড়ে তুলতে পারব একটি অহিংস, সহাবস্থানে সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব।

Manual5 Ad Code

জগতের সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

Manual1 Ad Code

লেখক পরিচিতি : সেক্রেটারী, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলী এলিট।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Sylheter Kotha
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!