আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::: সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগের তুলনা পৃথিবীতে নেই। এই ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের মূল্য কোনো অর্থে মাপা যায় না বলেই আমরা মা’কে বলি ‘ত্যাগী জননী’। বয়স যতই হোক, সন্তানের বিপদে মা হয়ে ওঠেন অদম্য যোদ্ধা। এমনই এক অনন্য উদাহরণ গড়েছেন চীনের ৯০ বছরের এক মা। ছেলেকে বাঁচাতে আদালতে নিজেই দাঁড়ানোর জন্য শিখেছেন আইন, অবহেলা করেছেন বয়সের সীমাবদ্ধতা আর শারীরিক দুর্বলতাকে। বৃদ্ধ বয়সেও তার এই লড়াই প্রমাণ করে— মায়ের হৃদয়ে সন্তানের জন্য ভালোবাসা কখনোই বয়সের কাছে হার মানে না।
চীনের বৃদ্ধ এই মায়ের কাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দেশটিতে। হে নামের এই নারীর তার ছেলে লিনকে (৫৭) রক্ষা করতে আইন শিখতে উঠেপড়ে লেগেছেন। যে বয়সে তার থাকার কথা ছিল ঘরে, সেই মা আইনের জ্ঞান অন্বেষণে বিচরণ করছেন কখনো বই-জার্নালে, কখনো আদালতের বারান্দায়।
সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলে লিনকে গত বছরের এপ্রিল মাসে চীনের স্থানীয় উদ্যোক্তা হুয়াং-এর কাছ থেকে প্রায় ১৪১ কোটি টাকা (১১৭ মিলিয়ন ইউয়ান) চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের ঝৌশান মিউনিসিপ্যাল ইন্টারমিডিয়েট কোর্টে চলছে আলোচিত এই চাঁদাবাজি মামলা। যেখানে ৯০ বছরের মা হে নিজেই আইনজীবীর ভূমিকায় ছেলের পক্ষে লড়ছেন। মামলার সর্বশেষ শুনানি হয়েছে ৩০ জুলাই।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছেলেকে খুব মিস করতে করতে মিসেস হে আইন শেখার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের সদস্যরা তার উচ্চ বয়সের কারণে আপত্তি তুললেও তিনি একগুঁয়েভাবে সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তার নাতনির ভাষায়, ‘দাদী একগুঁয়ে, কারও পরামর্শ শোনেননি।’
তিনি ক্রিমিনাল ল ও ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ল সম্পর্কিত বই কিনে নিজে পড়াশোনা শুরু করেন। শুধু বই-জার্নাল নয়, প্রতিদিন আদালতে গিয়ে এ সম্পর্কিত মামলার নথি অধ্যয়ন করাও তার রুটিনে পরিণত হয়েছে।
লিন ও হুয়াং একসঙ্গে গ্যাস উৎপাদন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে চীনের শীর্ষ ধনী ১০০ জনের একজন হওয়া সত্ত্বেও হুয়াং প্রায়ই অর্থ প্রদানে দেরি করতেন। এতে লিনের কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।
২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে লিন ও তার হিসাবরক্ষক কর কর্তৃপক্ষকে হুয়াং-এর অনিয়ম জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ১১ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ান আদায় করেন বলে অভিযোগ উঠে। ২০২৩ সালের শুরুতে হুয়াং পুলিশে অভিযোগ করে লিনকে চাঁদাবাজির মামলায় জড়িয়ে দেন।
প্রথমবার আদালতে হাতকড়া পরা ছেলেকে দেখে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েন ও কান্নায় ভেঙে পড়েন মিসেস হে। আবেগে ভেঙে পড়ায় আদালত আগাম প্রস্তুত অ্যাম্বুলেন্স থেকে ডাক্তার এনে পরীক্ষা করায়। ডাক্তাররা হাসপাতালে যেতে বললেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি ছেলের পাশে থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
Leave a Reply