সংবাদদাতা, মধ্যনগর ::: প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলায় চালু হতে যাচ্ছে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’। এ কর্মসূচির আওতায় সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, শাল্লা এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় যুক্ত হলেও সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলা এ কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছে। এ নিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত ও নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের ভাষ্য, দারিদ্র্যসীমার নিচের এলাকাগুলোতে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র-২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, মধ্যনগরের বাসিন্দারা তালিকার মাঝামাঝি অবস্থানে (২১ দশমিক ১৫ শতাংশ) থাকায় এ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়নি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মধ্যনগর একটি নতুন উপজেলা। ২০২২ সালে মধ্যনগরে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় পাশের ধর্মপাশা উপজেলা ও মধ্যনগর উপজেলার দারিদ্র্যের সূচক নির্ণয়ে জরীপ কাজ একীভূত ছিল। এতেকরে মধ্যনগর উপজেলাটির প্রকৃত তথ্য বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র-২০২২ এ পৃথকভাবে সন্নিবেশিত হয়নি।
তাদের দাবী, কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জেলার অন্যান্য উপজেলার দারিদ্র্যতার হার কোনোভাবেই মধ্যনগরের চেয়ে বেশি হতে পারে না। এ কর্মসূচিতে অনেক ধনী উপজেলার নাম যুক্ত থাকলেও দারিদ্র্যপীড়িত নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলা বৈষম্যের শিকার হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের বাড়ি মধ্যনগরে। তাঁর সুদৃষ্টি কামনা করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তারা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়,সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবারও স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হতে যাচ্ছে।’সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ বা মিড ডে মিল প্রকল্পটির আওতায় স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন সরবরাহ করা হবে পুষ্টিকর খাবার। এর মধ্যে রয়েছে বনরুটি, সেদ্ধ ডিম, ইউএইচটি দুধ, ফরটিফাইড বিস্কুট এবং মৌসুমি ফল বা কলা। সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করা হবে বনরুটি ও সেদ্ধ ডিম। সোমবার বনরুটি ও দুধ এবং বুধবার মিলবে ফরটিফাইড বিস্কুট ও মৌসুমি ফল বা কলা। প্রতিটি বনরুটির ওজন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ গ্রাম, প্রতিটি ডিম ৬০ গ্রাম, দুধ ২০০ গ্রাম, বিস্কুট ৭৫ গ্রাম ও ফল ১০০ গ্রাম।
এর আগে২০১০ সালে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করে সরকার। গতবছরের জুন মাসের পর থেকে এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
স্থানীয়রা জানান, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম বন্ধের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দূর্গম হাওরবেষ্টিত মধ্যনগর উপজেলায়। উপজেলার প্রায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু করা না হলে পুরো সময়ে শিক্ষার্থী ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
শিশু স্কুলে যেতে না চাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ওই উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। তাদের মতে, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু না হলে এত সমস্যা হতো না। কিন্তু শুরু করে আবার বন্ধ হওয়ায় স্কুলগামী শিশুদের কোমল মনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বেশিরভাগ শিশু বিস্কুট ছাড়া স্কুলে যেতে চায় না।
জানা গেছে, মধ্যনগর উপজেলায় শিক্ষার হার ২৩.০২ শতাংশ। এখানে ৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি কলেজ রয়েছে।
উপজেলার কাকরহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমূল গনী তালুকদার বলেন, মধ্যনগর উপজেলার বেশীরভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ভৌগোলিক কারনে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে শিশুদের স্কুলমুখী করা কষ্টসাধ্য। এর মধ্যে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার কমে গেছে।
উপজেলার নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, আমরা আগে বিদ্যালয়ে এলে টিফিনে আমাদের বিস্কুট দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে আমরা এখন আর বিস্কুট পাচ্ছি না। যার ফলে আমাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে চায় না।
উপজেলার বংশীকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক দিনমুজুর মো. রমজান মিয়া বলেন, আগে বিস্কুটের জন্য শিশুরা স্কুলে নিয়মিত যেত। এখন বিস্কুট না দেয়ায় স্কুলে যেতেই চায় না। আমি আমার ছেলেকে বিস্কুট কিনে দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে পাঠাই।
মধ্যনগরের ইউএনও উজ্জ্বল রায় বলেন, তিনি উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। উপদেষ্টা তাঁকে জানিয়েছেন, প্রকল্পটি দারিদ্র্যসীমার নিচের এলাকাগুলোতে চলবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মধ্যনগর এই শর্তের বাইরে থাকায় এ প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছে।
Leave a Reply